ওসিকে ঘটনা সাজানোর পরামর্শ দেন এসপি!
|
![]() মুক্তধারা ডেস্কঃ কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বাহারছড়ায় পুলিশের চেকপোস্টে সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার পর তাঁরই পরিকল্পনায় গোলাগুলি, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের মামলা সাজানো হয়। ওসি প্রদীপের কথামতো জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেন ঘটনাটি সাজানোর পরামর্শ দেন। দেশব্যাপী চাঞ্চল্য তৈরি করা এই ঘটনার পর এসপির সঙ্গে ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীর ফোনালাপের একটি অডিও প্রকাশ পেয়েছে। এতে দুজনের কথার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। তিনজনের কথায় অস্ত্রের কথা বলা হলেও মাদক উদ্ধারের ব্যাপারে কোনো তথ্যই ছিল না। অডিওতে শোনা যাচ্ছে, ওসি প্রদীপ এসপি মাসুদকে বলেন, সিনহা রাশেদ গুলি করায় তাঁর নির্দেশে লিয়াকত গুলি করেন। তবে লিয়াকত এসপিকে বলেন, সিনহা রাশেদ গুলি তাক করেছিলেন। এসপি মাসুদ তখন ওসি প্রদীপের সুরে লিয়াকতকে বলেন, ‘তোমারে গুলি করছে, তোমার গায়ে লাগেনি, তুমি যেটা করছ সেটা তার গায়ে লাগছে!’ এর মাধ্যমে ওসির সাজানো মামলায় এসপি সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, মেজর সিনহা নিহত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটির রিপোর্টে কক্সবাজারের এসপির বিরুদ্ধে কোনো বিষয় থাকলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না এমন ব্যক্তিদের সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে সাক্ষী বানানো হয়েছে পুলিশের সেই সাজানো মামলায়। কালের কণ্ঠ’র কাছে মামলার তিন সাক্ষী এমনই দাবি করেছেন। অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন বলছে, ওসি প্রদীপ থানায় এবং থানার বাইরে দুটি সিন্ডিকেট তৈরি করে ক্রসফায়ার ও সমঝোতার নামে টাকা আদায়ের কারবার করেছেন। ওসি প্রদীপ গ্রেপ্তার হলেও তাঁর এসব সহযোগী এখনো সক্রিয় আছেন। গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডির বাসভবনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, সিনহা রাশেদ নিহতের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরই এ মামলার জট খুলে যাবে। প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘তদন্তে কক্সবাজারের এসপির বিষয়ে কিছু পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ফোনালাপে ঘটনা সাজানোর আলামত পুলিশ আটক করার পর সিফাত যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানেও দুই পক্ষের অস্ত্র তাক করার তথ্য নেই। প্রকাশ পাওয়া সিফাতের একটি জবানবন্দিতে দেখা গেছে, তিনি বলেছেন, পথ আটকানোর কারণে সিনহা রাশেদ রেগে যান। তবে তিনি অস্ত্র নিয়ে গুলি করা তো দূরের কথা গুলি তাকও করেননি। সিফাত বলেন, ‘লিয়াকত সাহেবের সঙ্গে ডিবির দুই লোক ছিল। বাকিরা ইউনিফর্মে। পুলিশ রাগারাগি করে সিনহা ভাইকে গুলি করে। তখন আমরা সামনের দিকে যাচ্ছিলাম।’ থানায় ডেকে সাদা কাগজে সই নিয়ে সাক্ষী ওসি প্রদীপের দুই সিন্ডিকেট পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, থানায় ওসি প্রদীপের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বহাল আছেন এএসআই ফকরুল জামান, এসআই জামসেদ, এসআই সুজিত, কনস্টেবল নাজমুল (ওসির বডিগার্ড), এসআই মশিউর রহমান, এএসআই আমির হোসেন, এএসআই মিসকাত উদ্দিন, কনস্টেবল রুবেল দাশ (‘ক্রসফায়ারে’ সবচেয়ে বেশি গুলি ছুড়েছেন), কনস্টেবল মো. মহিউদ্দিন খান, কনস্টেবল আবদুল আজিজ, এসআই দীপক বিশ্বাস, এএসআই সঞ্জিব দত্ত, কনস্টেবল বাহার উদ্দিন, এএসআই মিঠুন চক্রবর্তী (ওসি প্রদীপের ভাগ্নে), কনস্টেবল সাগর দেব, এএসআই কাজী সাইফ মাহমুদ এবং টেকনাফ পৌর কমিউনিটি পুলিশিংয়ের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল হোসাইন। তাঁরা ক্রসফায়ারের নামে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। টেকনাফের ডেইলপাড়ার বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, ‘ওসি প্রদীপের সহযোগীরা নিরপরাধ লোকদের মাদক কারবারি বানিয়েছে। তারা অভিযানে গেলে সঙ্গে থাকত একটি করে নোয়া গাড়ি। এসব গাড়ি নিয়ে তারা টেকনাফের আনাচকানাচ চষে বেড়াত এবং লোকজনকে আটক করে রাতে থানায় নিয়ে যেত। কেউ দাবি করা টাকা না দিলে তার ভাগ্যে জুটত বুলেট।’ |