মোসাদের নতুন পরিচালক ‘ডি’ কে?
|
![]() মুক্তধারা ডেস্কঃ গোটা বিশ্বে বড় গোয়েন্দা মিশন পরিচালনার জন্য পরিচিত নাম মোসাদ। সংস্থাটি ইসরাইলের সীমানার বাইরে গোপনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা, শত্রু ভাবাপন্ন দেশগুলি যাতে বিশেষ ধরনের অস্ত্র তৈরি বা সংগ্রহ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা এবং দেশে-বিদেশে ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুর ওপর হামলার ষড়যন্ত্র আগাম প্রতিরোধ করা, যেসব দেশে ইসরাইলের অভিবাসন সংস্থা আইনত সক্রিয় হতে পারে না, সেই সব দেশ থেকে ইহুদিদের ইসরাইলে নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করে মোসাদ। গেল সপ্তাহে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু সেই সংস্থার নতুন পরিচালকের নাম ঘোষণা করেছেন। বলা হয়েছে, এখন থেকে মোসাদের পরিচালক ‘ডি’। কে এই ডি? কেন তাঁর পুরো নাম বলা হলো না? ইউকিপিডিয়ার তথ্য থেকে জানা যায়, মোসাদ হিব্রু শব্দ, যার ইংরেজি ইনস্টিটিউট, বাংলা করলে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠান। ইসরায়েলি সামরিক ও অসামরিক গোয়েন্দা বিভাগের বাছাই করা কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানের আটটি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি সম্পর্কে সামান্য তথ্য জানা যায়। কালেকশন ডিপার্টমেন্ট: এটি মোসাদের সবচেয়ে বড় বিভাগ। বহির্বিশ্বে ডিপ্লোম্যাট, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ অন্যান্য ছদ্মবেশে কাজ করেন এই বিভাগের এজেন্টরা। পলিটিক্যাল অ্যাকশন এবং লিয়াজোঁ ডিপার্টমেন্ট: এ গ্রুপের কাজ প্রতিটি বন্ধুভাবাপন্ন দেশের গোয়েন্দা ও গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করা। স্পেশাল অপারেশন ডিপার্টমেন্ট: এই গ্রুপকে গুপ্তহত্যার কাজে ব্যবহার করা হয়। ল্যাপ ডিপার্টমেন্ট: এই গ্রুপ প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের জন্য প্রচার চালায় ও শত্রু শিবিরে ভুল খবর ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে। রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট: যাবতীয় গোয়েন্দা গবেষণা ও ‘কাউন্টার ইনটেলিজেন্স’-এর ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ বৃদ্ধির নিরন্তর কাজ করে চলেন এই গ্রুপের গবেষকরা। আরব লীগের প্রত্যাখ্যানের মুখে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে দখলভূমিতে ইসরাইলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ইউরোপে ইহুদি নিধনযজ্ঞ বা ‘শোয়া’র দুঃস্বপ্ন ভুলতে পারেনি সেদেশের মানুষ। ফলে আরও একবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দূর করতে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে শুরু থেকেই প্রস্তুত ছোট্ট এই ইহুদি রাষ্ট্র৷ রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার ১৯ মাসের মাথায় দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডাভিড বেন গুরিয়ন ‘মোসাদ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ডিসেম্বর ১৩, ১৯৪৯ সালে দ্য সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট ফর করডিনেসন নামে মোসাদের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫১ সালের মার্চে। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার আগেই যেসব ইহুদি নিষিদ্ধ সংগঠন সংগ্রাম চালাচ্ছিল, তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে যে কাঠামো গড়ে উঠেছিল, তাকে ‘মোসাদ’ এর পূর্বসূরি বলা হয়। মোসাদ সামরিক সার্ভিস নয়। যদিও অধিকাংশ কর্মকর্তাই ইসরাইলের ডিফেন্স ফোর্সের। সাধারণত এই ধরনের গুপ্তচর সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না। তবে মোসাদের সাবেক ডিরেক্টরের নাম সকলে জানতেন। ইওসি কোহেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন। বাহরাইন এবং আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন কোহেন। অতি সম্প্রতি নেতানিয়াহুর সঙ্গে আরবের যুবরাজ দেখা করতে গিয়েছিলেন বলে ইসরায়েলের একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি। যদিও ওই বৈঠকের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে আরব। কিন্তু বর্তমান ডিরেক্টরকে কেউ চেনেন না। সে কারণেই তাঁর নামও গোপন রাখা হয়েছে। নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, এর আগে ডি মোসাদের ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন। মোসাদের প্রায় প্রতিটি ডিভিশনেই তিনি কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ইসরাইলের এলিট ফোর্সে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে যুক্ত ছিলেন তিনি। সম্প্রতি ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার ঘটনাতেও তাঁর ভূমিকা ছিল বলে কোনো কোনো মহলের দাবি। তবে ওই ঘটনা ঘটেছিল কোহেনের আমলে। ডি-কে ডিরেক্টর ঘোষণা করায় খুশি মোসাদের সাবেক ডিরেক্টররা। সকলেরই বক্তব্য গুপ্তচরবৃত্তিতে অত্যন্ত পারদর্শী ডি। তাঁর নেতৃত্বে মোসাদ নতুন নতুন অপারেশন চালাবে বলেই মনে করছেন মোসাদের সাবেক কর্মকর্তারা। সূত্র: রয়টার্স মোসাদ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায় ১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনা থেকে নাৎসি তথা জার্মানি হিটলারের গণহত্যার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যাডলফ আইখম্যানকে অপহরণ করে ইসরায়েলে নিয়ে আসা এবং বিচারের মুখোমুখি করানোর পর থেকে। শান্তিকালীন ওই ধরনের অভিযান ছিল অবিশ্বাস্য, যা আজও গোয়েন্দাকাহিনির অন্যতম শীর্ষ অভিযান। এরপর উগান্ডার এন্টেবি বিমানবন্দর থেকে জিম্মি উদ্ধার এবং ১৯৭২ সালে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর নামক পিএলওর কমান্ডো দ্বারা মিউনিখ অলিম্পিকে যোগদানকারী ১১ জন ক্রীড়াবিদকে হত্যার প্রতিশোধে ওই কর্মকাণ্ডে জড়িত একজন বাদে সবাইকে বিভিন্ন দেশে গিয়ে গুপ্তহত্যা করা। এর মধ্যে একজন ভুলবশত হত্যার শিকার হন। হালে হামাস নেতাদের কয়েকজনকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে মোসাদের বিরুদ্ধে। সূত্র: ডেইলি সাবাহ, বিবিসি, আনাদোলু নিউজ এজেন্সি। |