বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাডড়িয়া ইউনিয়নের অংকুজানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। তার বর্তমান বয়স ৫০। গত ১৪ বছরে বিভিন্ন জায়গায় তিন হাজারের বেশি মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করেছেন তিনি। লাশ দাফনের জন্য কোনো টাকা-পয়সা নেননি। বরং নিজের সাধ্যমতো দুস্থ ও গরিব মানুষের দাফনের কাপড়সহ প্রয়োজনে খরচও দেন। পেশায় কৃষক ইসমাইল হোসেন কাজের ফাঁকে লাশ দাফনের কাজটা করে যাচ্ছেন প্রতিদিন। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরে উপকূলীয় জেলা বরগুনার তালতলী উপজেলার অসংখ্য মানুষ মারা যায়। ওই সময় একটি কবরে একসঙ্গে অনেক জনকে দাফন করা হয়। তখন অনেক মৃত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে নিজ হাতে গণকবর দিয়েছেন ইসমাইল হোসেন। সডরের সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ইসমাইল হোসেন একটি টর্চলাইট নিয়ে নেমে পড়েন স্বজনদের খোঁজে। স্বজনদের খোঁজে যাওয়ার সময় অসংখ্য মানুষের লাশ দেখেন তিনি। একটি ব্রিজের গোড়ায় দেখেন ১৩টি লাশ সারিবদ্ধভাবে পড়ে আছে। বিশেষ করে ওই ১৩ জন লাশের দাফনের মধ্য দিয়ে লাশ দাফন সেবার কাজের অভিজ্ঞতা শুরু হয় ইসমাইল হোসেনের। এরপর থেকেই বিভিন্ন কবরস্থানে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনের কাজ করেন তিনি। প্রায় ১৪ বছর ধরে কাজটি করে যাচ্ছেন। ইসমাইল হোসেন জানান, গত ১৪ বছরে তিন হাজারেরও বেশি লাশ দাফন করেছেন। লাশ দাফনের পরে অনেক মানুষ টাকা-পয়সা দিতে চেয়েছে কিন্তু তিনি নিঃস্বার্থে এসব কাজ করেন। উল্টো গরিব-অসহায় মানুষকে টাকা-পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করেন। এসব কাজ করে মনে একটা তৃপ্তি পান বলে জানান ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমারও তো মরতে হবে, আমাকেও কেউ দাফন করবে। আমি যতদিন বাঁচব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন সেবার কাজ করে যাব।’ এ ব্যাপারে বরগুনা সদরঘাট মসজিদের ইমাম মুফতি গোলাম মাওলা জাহিদ বলেন, ‘কোনো কিছুর বিনিময় ছাড়া মুসলমান ব্যক্তির দাফন কাজ সম্পন্ন করেন ইসমাইল হোসেন। আল্লাহ তাকে উচ্চ স্থানের সওয়াব দান করবেন। এর কারণ হচ্ছে, কোনো মুসলমান মারা গেলে তাকে দাফন করার দায়িত্ব হচ্ছে সারা পৃথিবীর মুসলমানদের। যেই দায়িত্বটা তিনি একাই করছেন। এর চেয়ে উত্তম কাজ আর কোনোটাই হতে পারে না। এর ফল আল্লাহ তাকে নিজ হাতে দেবেন।’