কামালের সাজায় সরোয়ার ‘রাজা’
|
![]() মুক্তধারা প্রতিবেদকঃ একজন প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশনের মেয়রও ছিলেন। দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় দুটি পদে আছেন। অন্যজন সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকার পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় দুটি পদে ছিলেন। তাঁদের বলা হয়, দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। দুজনই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। একজন হলেন মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও দলের বরিশাল নগর শাখার সভাপতি। অন্যজন আহসান হাবীব কামাল। একসময় দলের কেন্দ্রীয় মৎস্য সম্পাদক ও জেলা সভাপতির দায়িত্বে থাকলেও দুটি পদই হারিয়েছেন। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বরিশাল বিএনপির অভ্যন্তরীণ সব দ্বন্দ্বের পেছনে রয়েছেন এ দুই নেতা। এ দুই নেতার দ্বন্দ্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা প্রাণ হারিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের মূল কারণ দলীয় পদ এবং নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে। দলীয় পদ ও নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে সব সময় এগিয়ে ছিলেন সরোয়ার। এবার একটি দুর্নীতি মামলায় কামালের সাজা হওয়ায় তাঁকে জেলা ও মহানগর বিএনপিতে ‘রাজা’ বলছে দলীয় সূত্রগুলো। তারা বলছে, এখন জেলা ও নগর বিএনপি সরোয়ারের দখলে চলে গেছে। যে কারণে কামালের সাজার ব্যাপারে কোনো বিবৃতি বা কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। আদালত সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা একটি মামলায় গত ৯ নভেম্বর সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালসহ পাঁচজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। এর পর থেকে তিনি কারাবন্দি। নগরীর বেশ কিছু জায়গায় কামালের বিরুদ্ধে করা এ মামলা প্রত্যাহার ও তাঁর মুক্তির দাবিতে পোস্টার লাগানো হয়েছে। যাতে লেখা আছে, প্রচারে—জেলা ও মহানগর বিএনপি। যদিও জেলা ও মহানগর বিএনপি এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি কিংবা কোনো কর্মসূচি পালন করেনি। উপরন্তু তারা বেশ সন্তুষ্ট হয়েছে বলে দলের একাংশ বলছে। বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দ্বন্দ্বের কোনো বিষয় এখানে নেই। দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া দলের কোনো কর্মসূচি পালন করা যায় না। দুর্নীতির মামলায় কামালের সাজা হয়েছে, হাইকমান্ডের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।’ দলীয় সূত্রগুলোর দাবি, কামাল ও সরোয়ারের দ্বন্দ্বের বলি হন বরিশাল কলেজ শাখা ছাত্রদল নেতা রাফসান আহমেদ জিতু। জিতু ছিলেন কামালের অনুসারী। ওই মামলায় আসামি করা হয় সরোয়ারের অনুসারী বিএম কলেজ শাখা ছাত্রদল নেতা ফিরোজ খান কালু ও তাঁর ভাই মিরাজ খান। ওই সময় কামাল ও সরোয়ারের পক্ষ পাল্টাপাল্টি মিছিল-সমাবেশও করে। পরে কালু ও মিরাজ নিখোঁজ হন। এ ব্যাপারে কামালের পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। ২০১৩ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আহসান হাবীব কামাল দলীয় মনোনয়ন পান। তাঁকে তখন জেলা বিএনপির সভাপতি পদ ছেড়ে দিতে হয়। নির্বাচিত হয়ে কামাল প্রকাশ্যে সরোয়ারের সঙ্গে আবার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন। অবশ্য ২০১৪ সালে দলের কেন্দ্রীয় পদও হারান কামাল। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে নগর আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পান সরোয়ার। তখন মেয়র পদে থাকা কামাল বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। যারা কামালের মুক্তি চেয়ে শহরে পোস্টার লাগিয়েছে তাদের কারো কারো সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। তবে বরিশাল জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় সাবেক মেয়র কামালের সাজা হয়েছে। এটা দলীয় কোনো বিষয় নয় কিংবা রাজনৈতিক কোনো মামলা নয়। তাই তাঁর মুক্তি কিংবা সাজা মওকুফের জন্য কোনো আন্দোলন কিংবা বিবৃতির প্রশ্নই আসে না।’ বিএনপির বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, ‘একজন সাবেক মেয়রের সাজা হওয়াটা সত্যিই দুঃখজনক। তবে এটা বিএনপির দলীয় কোনো বিষয় নয়।’ |