বুধবার ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   বুধবার ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


ভাঙনে দিশেহারা নদী তীরের মানুষ
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১:৪৯ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

ভাঙনে দিশেহারা নদী তীরের মানুষ

মুক্তধার প্রতিবেদক:
ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদী পরিবেষ্টিত বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার নদীর তীরে বসবাসকারীরা। এ উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা, মাসকাটা, লতা, কালাবদর, ইলিশাসহ বেশকিছু নদী।

আর এজন্যই বলা হয়ে থাকে দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে সর্বাধিক নদী সমৃদ্ধ এলাকা এটি, যেখানে স্থল পথের থেকে নদী পথেই মানুষের যাতায়াত বেশি। আর নদীর মানুষগুলোর একটি বৃহত্তর অংশ মৎস্য শিকার করেই জীবিকা-নির্বাহ করে থাকেন। তবে নদীর ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ উপজেলার বেশকিছু গ্রামের নদী তীরের মানুষ।
বছরের পর বছর ধরে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। আর এ ভাঙনে শুধু ফসলি জমি কিংবা ভিটে-মাটি বিলীন হয়েছে এমন নয়, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনাও নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। .২০১৮ সালে বাহেরচর শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান খোলা চিঠি লিখে দাবি জানিয়েছিলেন তার বিদ্যালয়টিকে নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করার। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বিদ্যালয়ের নতুন ও পুরাতন দুটি ভবনই কালাবদর নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। এমনকি ভবন দুটি বিলীনের পর স্থানীয়দের উদ্যোগে কাঠ ও টিন দিয়ে যে ঘরটি তৈরি করা হয়েছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানোর জন্য সেই স্থানটিও নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে।

নুসরাত এখন প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে পড়াশুনা করছেন। কিন্তু তার সেই বিদ্যালয়টি নদীর ভাঙনের হাত থেকে যেমন রক্ষা পায়নি, তেমনি নদী থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে থাকা নুসরাতের পৈত্রিক বাড়িটিও ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।

বাহেরচর শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নদীগুর্ভে বিলীন হওয়ার পর বিকল্পভাবে যে জায়গায় এর কার্যক্রম চালু হয়েছিলো। সে জায়গাও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আর স্মৃতি বিজড়িত আমার বাবার বাড়িটিও নেই। নদীর ভাঙনে স্বপ্ন বিলীন হলেও বাবা সংসারের হাল এখনো আগের মতোই ধরে রেখেছেন। আর আমাদের পড়াশুনাও চলছে। এখন বিদ্যালয় যেমন নদীর কাছ থেকে দূরে তেমনি নতুন যে বাড়িতে থাকছি সেটিও দূরে।

এখন মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের চরবগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবলে রয়েছে। বিদ্যালয় থেকে নদী দূরত্ব মাত্র ১০-১২ গজ। .এ ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি বশিরুল হক বলেন, চরবগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা ছিলো। প্রায় ১০ কিলোমিটার লম্বা ওই সড়কটির দুইপাশেই বহু বাড়িঘর ছিলো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে নদীর ভাঙন এতোটাই তীব্র যে সেই রাস্তাসহ বাড়িঘরের জমি সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কে জনপ্রতিনিধি, কে রাজনৈতিক নেতা, কে সাধারণ মানুষ কিছুই দেখেনি নদী। সে তার আপন ইচ্ছেতে ভেঙেছে।

তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙনের শিকার হওয়া মানুষগুলো যে যার মতো নতুন আবাস গড়েছেন। কেউ জমি কিনে নিজের মতো করে ঘর তুলেছেন, আবার কেউ খাজনার জমিতে ঘর তুলেছেন। কেউ এ গ্রামেই আছেন, কেউ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র গেছেন। তবে বেশিরভাগ মানুষ মৎস্যজীবী হওয়ায় নদীর কাছে থেকেই ভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবনকে এগিয়ে নিচ্ছেন। আর জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি বসতঘর ভাঙা-গড়ার কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন বৃহত্তর মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সদরের রুকুন্দি, সাদেকপুর, শ্রীপুর ইউনিয়নের, বাহেরচর, চরবগী এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভাষানচর, চরগোপালপুর, জাঙ্গালিয়া ও উলানিয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু জায়গাতেও নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। যে ভাঙনের কারণে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ফসলি জমি, বসতঘর, বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা।

নদী ভাঙনের বসতঘর বিলীন হয়ে যাওয়া মোশারেফ হোসেন খান জানান, ভাঙনে গেলো প্রায় ১০ বছরে বহু মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। কিন্তু ভাঙনরোধে যেমন কার্যকর ভূমিকা এখনও দৃশ্যমান হয়নি, তেমনি ভাঙনের কবলে পরে নিঃস্ব হওয়া মানুষগুলোকে সেইভাবে কোনো সহায়তাও দেওয়া হয়নি। .এদিকে শ্রীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লোকমান হোসনে বলেন, ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার দাবিটাও নদী তীরের মানুষের বহু পুরাতন। শুধু শ্রীপুর ইউনিয়নকে রক্ষার দাবিতে ২০১২ সালে জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন, ২০১৭ সালে নদী ভাঙন রক্ষা কমিটি, ২০১৯ সালে সূর্য তরঙ্গ ও যুব সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশনের ব্যানারে মানববন্ধন, স্মারকলিপি জমাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তবে কার্যত ভাঙনরোধ করা এখনো সম্ভব হয়নি। ভাঙতে ভাঙতে শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামই আজ বিলুপ্ত হয়েছে।

তবে শুধু শ্রীপুর নয় নদী ভাঙনে এ অঞ্চলের অনেক এলাকার মানচিত্রেই পরিবর্তন এসেছে বলে জানিয়েছেন জয় চক্রবর্তী নামের এক শিক্ষক।

তিনি বলেন, নদী ভাঙনের কারণে উলানিয়া সঙ্গেই থাকা গোবিন্দপুর ইউনিয়ন বিলীন হয়ে গেছে। এখন যে জায়গাতে গোবিন্দপুর ইউনিয়নের জেগে ওঠা চরের ভূমি রয়েছে, সেটি মেহেন্দিগঞ্জের থেকে লক্ষ্মীপুরের বেশি কাছে। তারপরও সংগ্রামী মানুষ সেখানে গিয়েও বসতি গড়ছেন, নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন।

তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন দেখা হয়। কিন্তু বাস্তবে সবটা পূরণ হয় না। ধরুন শ্রীপুরে স্বাধীনতার পর গেলো বছর প্রথম সরাসরি বিদ্যুৎ এসেছে। কিন্তু এই বিদ্যুৎকে কাজে লাগিয়ে যখন উন্নয়ন ঘটবে, তবে নদী ভাঙন দিয়েছে মানুষকে দিশেহারা করে। নদীর ওপরে জেগে ওঠা চরে ভাঙন কবলিত এপাড়ের মানুষ আবাস গড়ার চিন্তা করছেন। কিন্তু সেখানে নেই কোনো রাস্তাঘাট, নেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা। তারপর জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তারা।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

 

প্রকাশক ও সম্পাদক
মোঃ আজিম হোসেন
ঠিকানাঃ আ: করিম ভবন, রাড়িমহল, চরবাড়িয়া, বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।

 

যোগাযোগ
মোবাইলঃ 01782212626
মেইলঃ msuhad@gmail.com

Design & Developed by
  ভারতে করোনা পরিস্থিতির ফের অবনতি   বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত-মৃত্যুর সবশেষ   এবার নেপালের জন্য আম উপহার পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   বাংলাদেশিদের জন্য ব্রিটেনে মাস্টার্স প্রোগ্রামে বৃত্তি ঘোষণা   দাড়ি কামাতে মোদিকে ১০০ টাকা পাঠালেন চা বিক্রেতা   ফিলিস্তিনিদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ইসরায়েলের হামলা   ইসরাইলকে হুশিয়ারি ফিলিস্তিনের   এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক   ‘বক্সিং ডে টেস্ট’ আসলে কী?   কাতারে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ   সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করল সৌদি   মোসাদের নতুন পরিচালক ‘ডি’ কে?   গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করছে যুক্তরাষ্ট্র   হাসিনা-মোদি বৈঠকে স্বাক্ষর হতে পারে ৯টি সমঝোতা স্মারক   ৬১০ মাদরাসা বন্ধ করে দিচ্ছে ভারত   শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়াল বৈঠক ১৭ ডিসেম্বর   বাইডেনের কাছে অলৌকিক কিছু চায় না ইইউ, তবে…   এবার আমেরিকার ক্রিকেট লিগে বিনিয়োগ করছেন শাহরুখ   করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার মধ্যেই নিউইয়র্কে খুলছে স্কুল   বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর আটজনই প্রযুক্তিখাতের উদ্যোক্তা