কী হবে লকডাউনে
|
![]() মুক্তধারা ডেস্কঃ রাজস্ব খাত-ব্যাংক খোলা না রাখলে বিপদ, ঈদ সামনে রেখে নানামুখী জটিলতা, বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে লকডাউনে পোশাক কারখানা খোলা রাখতে চান মালিকরা। তারা বলছেন কারখানা বন্ধ হলে ৪০ লাখ শ্রমিক ঘরমুখী হলে রাস্তাঘাটে ভয়ংকর সংকট ও সংক্রমণ বাড়বে। ব্যবসায়ীদের বড় অংশই বলছেন ঈদ, জুন ক্লোজিং ও নতুন অর্থ বছর শুরুকে ঘিরে ব্যাংক খোলা রাখা জরুরি। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন ও মেগাপ্রকল্প ধরে রাখতে ভূমি কর, বিদ্যুৎ, পানিসহ রাজস্ব খাতে সব অফিস খোলা রাখা অপরিহার্য। কোনো কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলে সামাজিক ও আর্থিক অস্থিরতা বাড়বে। এ কারণে বাস্তবতার নিরীখেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে অনেক ব্যবসায়ী ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, সরকার ঘোষিত লকডাউন পয়লা জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে। কিন্তু ঈদুল আজহা ২০ বা ২১ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। ঈদকে ঘিরে বেতন ও বোনাসের বাড়তি চাপে থাকেন ব্যবসায়ীরা। শিল্প খাত বন্ধ হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিয়মিত বেতন ভাতা। বিশেষ করে রপ্তানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করতে হয় আন্তর্জাতিক পরিসরে। ইউরোপ আমেরিকায় ব্যাপক হারে ভ্যাক্সিন দেওয়ার কারণে তাদের সব আর্থিক খাত এখন স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। যেসব দেশের শিল্প কলকারখানা স্বাভাবিক উন্নত বিশ্ব তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে ব্যবসায়িক অর্ডারগুলো দিচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। এ অবস্থায় গার্মেন্ট বন্ধ হলে রপ্তানি বাণিজ্য হুমকিতে পড়বে। রিহ্যাবের সূত্র জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে কাজ করে লাখ লাখ শ্রমিক। পাশাপাশি দালান নির্মাণের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কয়েক শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একটির সঙ্গে আরেকটি জড়িয়ে থাকার কারণে ব্যাংক খোলা রাখা অপরিহার্য। পাশাপাশি শ্রমিকরা কাজ করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানই হুমকিতে পড়বে। যার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে অর্থনীতিতে। আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, লকডাউন কার্যকর সমাধান নয়। করোনা মোকাবিলায় সময়মতো সিদ্ধান্ত না নিলে বিপর্যয় হবে। যে কোনো মূল্যে মানুষের জীবন ও জীবিকা সচল রাখতে হবে। শিল্প, কল-কারখানা চালু রাখতে হবে। করোনা মোকাবিলায় জনসচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। এখন মহামারী গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত ধাবিত হচ্ছে। জানা যায়, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এই মুহূর্তে লকডাউন নিয়ে উদ্বিগ্ন। দোকানমালিকরা এরই মাঝে তাদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা করোনাকালে শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি হোটেল রেস্তোরাঁও ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ কারণে তারাও বাস্তবমুখী সিদ্ধান্তের পক্ষে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এসএমই উদ্যোক্তা কাজী সাজেদুর রহমান বলেন, আমরা গত দুই বছর ধরে দেখছি স্বাস্থ্যবিধির জন্য লকডাউন দেওয়া হচ্ছে কিন্তু কেউ কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। কিন্তু ব্যবসা বাণিজ্য ঠিকই বন্ধ থাকছে। এর দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা আসবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অনেকে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা আর ব্যবসায় ফিরতে পারবে না। তাই এরকম ভাবে লকডাউন বা শাটডাউন দিয়ে অর্থনীতি বন্ধ করে দিলে কোনো সমাধান হবে না। সরকার বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিয়েছে। সেটা ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছে যথাযথ ভাবে বণ্টন হয়নি। এখন ব্যবসায়ীদের ব্যাংকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে না। তবে ঋণের সুদ জমছে। যদি ব্যবসা করতে না পারে তবে এক বছর পরে তারা এই অর্থ কীভাবে ফেরত দেবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অগ্রসরমান অবস্থানে রয়েছে। এ অবস্থা ধরে রাখতে দরকার ব্যাপকহারে টিকা দেওয়া। অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া না গেলে প্রয়োজনে চীনা টিকার পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি আমেরিকা থেকে বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানের টিকা আমদানি করা যায়। বিশেষ করে আমেরিকান টিকা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিলেও মানুষ এখন তা নেবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো এর আগে এ বিষয়ে আবেদনও জমা দিয়েছিল। ১২ থেকে ১৪ কোটি মানুষের মাঝে টিকা পৌঁছাতে হলে দেশেও উৎপাদনের অনুমতি দিতে হবে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে এ ব্যাপারে আবেদন করেছে। এ আবেদন বিবেচনায় নেওয়া উচিত বলে মনে করেন অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞই। অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ঢালাওভাবে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়। অর্থনীতি সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে তা সামাল দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের নেই। এটা ঠিক গত বছরের লকডাউনের মধ্যে শিল্পকারখানা বন্ধ না রেখে বাংলাদেশ ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। করোনার মতো এই সমস্যা আপাতত বা সাময়িক নয়। তাই এটা মেনে নিয়েই পদক্ষেপ নিতে হবে। হয়তো ভবিষ্যতে জন্মের সময়ই টিকা নিতে হবে সবাইকে। তাই লকডাউন দিয়ে কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করা বাস্তবসম্মত নয়। সরকারের উচিত দেশের কমপক্ষে ৭০ ভাগ লোককে টিকা দেওয়া। দেশেই টিকার উৎপাদন করতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে লকডাউনে দেওয়া যেতে পারে। তবে মানুষের জীবিকা, বেঁচে থাকার চিন্তাও করতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে অংশী করতে হবে করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে। আমলা কর্মচারী দিয়ে কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। |