সোমবার ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   সোমবার ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


অঙ্গচ্ছেদে বিচলিত ইসি, মুণ্ডুচ্ছেদনে নয়
প্রকাশ: ৫ জুন, ২০২১, ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

অঙ্গচ্ছেদে বিচলিত ইসি, মুণ্ডুচ্ছেদনে নয়

মুক্তধারা ডেস্কঃ

সিইসি কে এম নূরুল হুদা ও কমিশনার মাহবুব তালুকদার
সিইসি কে এম নূরুল হুদা ও কমিশনার মাহবুব তালুকদার

ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের দেখভালের দায়িত্ব কেন নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা উচিত, সে সম্পর্কে গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় একটি তথ্য ও যুক্তিনিষ্ঠ কলাম লিখেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বাংলাদেশে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

এ নিয়ে আরেকটি লেখার প্রয়োজন পড়ত না, যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিতর্কটি সামনে নিয়ে না আসতেন। তাঁদের বক্তব্যের ভাষাভঙ্গি আলাদা হলেও মূল সুর এক—ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির দায়িত্ব কোনোভাবে সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এতে নির্বাচন কমিশনের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীন সত্তা ধুলায় মিশে যাবে।

নুরুল হুদা কমিশন প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের স্বাধীন সত্তা বিলীন করে দিয়ে বারবার অন্যায় হস্তক্ষেপের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বলেই সরকার এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনারও প্রয়োজন বোধ করেনি। চিঠি মারফত জানিয়ে দিয়েছে মাত্র। সরকার এই নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী বিভাগের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি কিছু মনে করে না

সিইসি কে এম নূরুল হুদা সরকারের সিদ্ধান্তের আপত্তি করার সঙ্গে সঙ্গে আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের এই বলে আশ্বস্ত করেছেন যে চিঠি দেওয়া মানে সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়া নয়। বিষয়টি জটিল। হয়তো সিইসি ভেবেছেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য যে ‘ত্যাগস্বীকার’ করেছে, তার প্রতিদান এমনটি হতে পারে না। আর নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সরকারের এই উদ্যোগকে নির্বাচন কমিশনের অঙ্গচ্ছেদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বলেছেন, এতে সংবিধান লঙ্ঘিত হবে।

কে এম নূরুল হুদা ও মাহবুব তালুকদার ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে অনেক কথা বললেও এর পটভূমি নিয়ে কিছু বলেননি। প্রকৃত ঘটনা হলো এম এ আজিজের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সময়ে যখন ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২০ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখনই ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির দাবি সামনে আসে। এ নিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলগুলো রাজপথে আন্দোলনও করেছে। কিন্তু বিএনপি সরকারের আমলে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা কিংবা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন হয়, যারা ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করে একটি সফল জাতীয় নির্বাচন দেশবাসীকে উপহার দিয়েছিল। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সেই উত্তরাধিকার বহন করলেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেনি। করার চেষ্টাও করেনি।

জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা দুটি ভিন্ন বিষয়। জাতীয় পরিচয়পত্র অনেক কাজে ব্যবহৃত হয়—পাসপোর্ট তৈরি থেকে ব্যাংক হিসাব—কোনোটিই এখন জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া হয় না। জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সরাসরি সম্পর্ক নেই। সংবিধানমতে, তাদের একমাত্র দায়িত্ব জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন সম্পন্ন করা। আর সেই নির্বাচনের জন্য একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা থাকা অপরিহার্য।

তাই নির্বাচন কমিশনের পদাধিকারীরা যখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠি পেয়ে শোরগোল তোলেন, তখন একটি প্রশ্ন করতে হয় মাননীয়গণ, এত দিন কোথায় ছিলেন? হুদা ও তালুকদার—দুজনই নির্বাচন কমিশনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু যখন নির্বাচনের নামে ভোটকেন্দ্র দখল হলো, ভোটের বাক্স ছিনতাই হলো, দিনের ভোট রাতে চলে গেল, মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হলো, তখন কেন তারা নিশ্চুপ থাকলেন? কেন ভোটবিহীন নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গাইলেন?

সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের ৮ ধারায় বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন।’ কিন্তু বাস্তবে আমরা সাত বছর ধরে কী দেখলাম (রকিব কমিশনের চার বছর ও নূরুল হুদা কমিশনের তিন বছর)? দেখলাম, তাঁরা কাগজপত্রে স্বাধীন হলেও কাজ করেছেন নির্বাহী বিভাগের অধীনস্থ ও আজ্ঞাবহ হিসেবে। ভোটার তালিকা তথা জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব স্থানান্তর নিয়ে তাঁদের আপত্তি করার নৈতিক অধিকার আছে কি না, সেটাও প্রশ্ন।

অন্যান্য দেশে সরকারই নাগরিকদের পরিচয়পত্র তৈরি করে থাকে। সেই পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনের ভিত্তিতে ভোটার তালিকা হয়। কিন্তু আমরা এখানে আগে ভোটার তালিকা তৈরি করেছি। পরে সেই তালিকার ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র হয়েছে। দুটো কাজই নির্বাচন কমিশন করে আসছে। এতে আপত্তির কিছু নেই। আপত্তির জায়গাটি হলো, যে নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করতে পারে না, যাদের জন্য বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের কিনারে এসে ঠেকেছে, তারা জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা ভোটার তালিকা নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা রাখেন কি না?

নির্বাচন কমিশন মাহবুব তালুকদারকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। তিনি সজ্ঞানে হোক আর অবচেতন মনে হোক, একটি কঠিন সত্য স্বীকার করেছেন। বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির দায়িত্ব নিয়ে যাওয়া হবে নির্বাচন কমিশনের কফিনে শেষ পেরেক মারা। কফিন কখনো জীবিত মানুষের জন্য তৈরি হয় না। কফিন তৈরি হয় মৃত মানুষের জন্য। আসলে কে এম নূরুল হুদা কমিশনের অবস্থা হয়েছে কফিনে পেরেক পোরার মতোই।

নূরুল হুদা কমিশন প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের স্বাধীন সত্তা বিলীন করে দিয়ে বারবার অন্যায় হস্তক্ষেপের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বলেই সরকার এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনারও প্রয়োজন বোধ করেনি। চিঠি মারফত জানিয়ে দিয়েছে মাত্র। সরকার এই নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী বিভাগের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি কিছু মনে করে না। সিইসি নূরুল হুদা ও কমিশনার মাহবুব তালুকদার এখন নির্বাচন কমিশনের অঙ্গচ্ছেদ হওয়ায় বিচলিত বোধ করছেন। কিন্তু তারা যে তিন বছরের বেশি সময় ধরে কমিশনের মুণ্ডুচ্ছেদ ঘটিয়েছেন, তার জবাব কী। মানুষের কোনো কোনো অঙ্গ অকেজো হলেও বাঁচতে পারে, মুণ্ডুচ্ছেদ হলে বাঁচতে পারে না। মুণ্ডুচ্ছেদ হওয়া কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা এখন এর অঙ্গচ্ছেদ নিয়ে আহাজারি করছেন।

জাতির সঙ্গে তামাশাই বটে!




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

 

প্রকাশক ও সম্পাদক
মোঃ আজিম হোসেন
ঠিকানাঃ আ: করিম ভবন, রাড়িমহল, চরবাড়িয়া, বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল।

 

যোগাযোগ
মোবাইলঃ 01782212626
মেইলঃ msuhad@gmail.com

Design & Developed by
  ভারতে করোনা পরিস্থিতির ফের অবনতি   বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত-মৃত্যুর সবশেষ   এবার নেপালের জন্য আম উপহার পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   বাংলাদেশিদের জন্য ব্রিটেনে মাস্টার্স প্রোগ্রামে বৃত্তি ঘোষণা   দাড়ি কামাতে মোদিকে ১০০ টাকা পাঠালেন চা বিক্রেতা   ফিলিস্তিনিদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ইসরায়েলের হামলা   ইসরাইলকে হুশিয়ারি ফিলিস্তিনের   এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক   ‘বক্সিং ডে টেস্ট’ আসলে কী?   কাতারে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ   সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করল সৌদি   মোসাদের নতুন পরিচালক ‘ডি’ কে?   গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করছে যুক্তরাষ্ট্র   হাসিনা-মোদি বৈঠকে স্বাক্ষর হতে পারে ৯টি সমঝোতা স্মারক   ৬১০ মাদরাসা বন্ধ করে দিচ্ছে ভারত   শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়াল বৈঠক ১৭ ডিসেম্বর   বাইডেনের কাছে অলৌকিক কিছু চায় না ইইউ, তবে…   এবার আমেরিকার ক্রিকেট লিগে বিনিয়োগ করছেন শাহরুখ   করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার মধ্যেই নিউইয়র্কে খুলছে স্কুল   বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর আটজনই প্রযুক্তিখাতের উদ্যোক্তা