লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষ পাচ্ছে সরকারের ত্রাণ সহায়তা
|
![]() মুক্তধারা ডেস্কঃ ৩৩৩-এ ফোন করলেও মিলবে সহযোগিতা কভিড মহামারির কারণে কঠোর বিধি-নিষেধ চলাকালে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তার বড় ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। লকডাউনের সময় গরিব মানুষ যাতে খাবারের অভাবে কষ্ট না পায় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিবহন শ্রমিকরাও যাতে সরকারি সহযোগিতা পায় তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন সরকারপ্রধান। লকডাউন সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এরই মধ্যে খাদ্য ও নগদ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এবং দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত তিন দিনের সীমিত বিধি-নিষেধের সময় গরিব-অসহায় মানুষকে সাহায্যের জন্য সারা দেশে ২৩ কোটি টাকা দিয়েছি আমরা। উল্লিখিত বরাদ্দের বাইরে মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ত্রাণ সহায়তার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সহায়তায় চাল, ডাল, তেল, মসলা থাকবে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সহায়তার সঙ্গে আমও থাকবে এবার।’ ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখনই আমরা ত্রাণ তৎপরতা শুরু করছি না। কভিড-১৯-এর বিস্তার রোধে কঠোর বিধি-নিষেধ কার্যকর হওয়ার পর চাহিদা তৈরি হওয়ার পর ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এমনিতে ঢাকা জেলার সব উপজেলায় ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া আছে। ৩৩৩ নম্বরে কেউ চাহিদার কথা জানালে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা আছে।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো নতুন তালিকার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের পরিকল্পনা নেই। নতুন তালিকাও তৈরি হয়নি। প্রয়োজন হলে আগের তালিকা অনুসরণ করা হবে। লকডাউনের মাঝে ত্রাণ বিতরণে প্রস্তুত ঢাকা উত্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ত্রাণের জন্যও আমাদের নিজস্ব প্রস্তুতি আছে। আবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেও ত্রাণের বরাদ্দ পেয়েছি।’ ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ত্রাণের জন্য আমাদের নিজস্ব ফান্ড এই মুহূর্তে নেই। তবে সরকার থেকে যে সহায়তা পেয়েছি, সেটা থেকে আপাতত জরুরি খরচের জন্য আমাদের ১০টি অঞ্চলে মোট ৫০ লাখ টাকা দিয়েছি।’ কালের কণ্ঠ’র স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানান, আজ থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে মাদারীপুরের রাজৈরে নিম্নবিত্তদের জন্য ৫০ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ৫০ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। এগুলো পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ার জন্য আমরা কিছু চাল রেখে দিয়েছি। প্রতিটি পরিবারকে আপাতত ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।’ ঝালকাঠিতে ৩৩৩ নম্বরে কল করে পাওয়া যাবে জেলা প্রশাসনের খাদ্যসামগ্রী। কর্মহীন মানুষকে এ পদ্ধতি ছাড়াও যেকোনো সময় প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। অল্প আয়ের পরিবারকে যাতে না খেয়ে থাকতে না হয়, এ জন্য আগের মতো বাড়িতে বাড়িতেও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জেলা প্রশাসনের। একইভাবে জেলার চারটি উপজেলায়ও ত্রাণ কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে নিম্নবিত্তদের জন্য কোনো ধরনের ত্রাণ মজুদ নেই, নেই কোনো বড় ধরনের বরাদ্দ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, তাঁদের কাছে করোনাকালীন কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে কোনো ত্রাণ মজুদ নেই। তবে যারা ৩৩৩-তে ফোন করে ত্রাণ সহায়তা চাইবে তাদের একজনও বাদ যাবে না। পরবর্তী নির্দেশনা ও বরাদ্দ আসার আগ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে সমন্বয় করে তাদের সহায়তা দেওয়া হবে। বোয়ালখালী উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে দুই দফায় ৭৮ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ৬১৭ প্যাকেট ত্রাণ নিম্নবিত্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে ৩২৫ জন ত্রাণ পেয়েছে। এ ছাড়া নগদ ১০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে অসহায় গোমস্তা ও বাওয়ালিদের মাঝে অর্থিক অনুদানের টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বুধবার সকালে সুন্দরবন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ওই অনুদানের টাকা বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম। সুন্দরবন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মো. জাহিদ উদ্দিনের সভাপতিত্বে সংগঠনের অনুষ্ঠানে ৬০০ জন গোমস্তা ও বাওয়ালি প্রত্যেককে এক হাজার টাকা প্রদান করা হয়। মানিকগঞ্জ জেলায় নিম্নবিত্তদের সহায়তা হিসেবে ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। মানিকগঞ্জ জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন জানান, এরই মধ্যে এই টাকা মানিকগঞ্জের সাত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই সুবিধাভোগীদের নির্বাচন করে বিতরণ করবেন। পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভায় স্থানীয় এমপি মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস ও পৌরসভার মেয়র ইছহাক আলী গতকাল পৌরসভা চত্বরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনা মহামারি উপলক্ষে কর্মহীন দিনমজুর, ছিন্নমূল- অসহায় ১৫০ পরিবারের মধ্যে চাল বিতরণ করেন। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাহিদা সুলতানা জানিয়েছেন, জেলার পাঁচটি উপজেলাতেই করোনা পরিস্থিতিতে দরিদ্রদের ত্রাণ সহায়তা চলমান। আজ থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট, অফিস স্টাফ, ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের সমন্বয়ে এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালানো হবে। গতকাল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় রামশীল ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র মানুষদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোকন বালা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। পাবনার ভাঙ্গুড়ায় করোনায় কাজের ক্ষেত্র কমে যাওয়ায় দরিদ্র মানুষদের মাঝে ধারাবাহিকভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি দিয়ে এই উপজেলায় লকডাউনের কারণে নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য আরো দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এ উপজেলায় অন্তত ১৫ হাজার পরিবার করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে। কঠোর বিধি-নিষেধ শুরুর আগেই রাজশাহী মহানগরীর ১২টি পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যবৃন্দ এবং গরিব, অসহায়, ছিন্নমূল, দিনমজুর ও কর্মহীন তিন হাজার ৫০টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী প্রদান করেছেন রাজশাহী সিটির মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। |