হাসপাতাল–প্রাইভেট চেম্বারে যাচ্ছেনা চিকিৎসকরা, ব্যাহত চিকিৎসাসেবা
|
![]()
মুক্তধারা প্রতিবেদক: দক্ষিণ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ একমাত্র চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি তে প্রতিদিন গড়ে ৪ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়। আর চিকিৎসাধীন থাকেন দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী। তবে চিরচেনা এর চিকিৎসা কেন্দ্র টিতে গতকাল গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। গতকাল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেয়ার জন্য মাত্র ৪৩জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাড়ে আটশ রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন করোনা আতঙ্কে স্বাভাবিক রুগিরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের অভিযোগ চিকিৎসকরা হাসপাতলে আসছেন না। যারা রয়েছেন তারা রোগীদের থেকে অনেক দূরত্বে দাঁড়িয়ে থেকে দু-একটি কথা বলছেন। রোগী সংকট কেবল হাসপাতালেই নয় একই অবস্থা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারী হাসপাতালে। বরিশালের বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে জানা গেছে, হঠাৎ করেই এসব হাসপাতালে চেম্বার করার চিকিৎসকরা রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে সাধারণ চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিনে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের মেঝে কিম্বা বারান্দায় শয্যাশীয় কোন রোগী নেই। নিচতলায় বর্হিবিভাগে হাতেগোনা কয়েকজন রোগী অপেক্ষা করছেন চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে। বেশীরভাগের কক্ষে চিকিৎসক অনুপস্থিত। যারা আছেন তারাও রোগী দেখছেন ঢিলেঢালাভাবে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী নয়ন ফরাজী জানান, চিকিৎসকরা রোগীদের দুরে দাড় করিয়ে ২/১টি কথা শুনে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছেন অথবা মোবাইল ফোন নম্বর দিচ্ছেন পরে যোগাযোগ করে ব্যবস্থাপত্র নেয়ার জন্য। শেবাচিম হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কি পরিমান কমেছে তা জানা গেছে সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর পরিসংখ্যান থেকে। গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৫৭ জন। বেলা ১২টা পর্যন্ত জরুরী বিভাগে এসেছেন মাত্র ৪৩ জন রোগী। জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত কয়েকজন জানান, অন্যান্য দিনে এসময়ে ২শতাধিক রোগী আসতেন জরুরী বিভাগে। হাসপাতালের নার্স তত্ত্বাবধায়ক সেলিনা বেগম বলেন, ১০০০ শর্য্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০০০ এর বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। করোনাভাইরাস আতংকের পর নতুন রোগী আসা কমে গেছে, রোগী যারা ছিলেন তারাও আতংকে দ্রুত হাসপাতাল ছেড়েছেন। এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে কিছু রোগী কম আসছে। যারা আসছে তারা চিকিৎসাসেবা নিয়ে চলে যাচ্ছে। তবে রোগীদের সেবা না দেওয়া এবং কিছু চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন চিকিৎসাসেবা সেভাবেই দেয়া হচ্ছে বিবির আতঙ্কের কারণে আসছে না। প্রাইভেট চিকিৎসা বন্ধ ডায়গণষ্টিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল সুত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাস আতংকে চিকিৎকরা চেম্বারে আসছেন না। তারা দাবী করেছেন, এ চিকিৎসকদের বেশীরভাগের বয়স ষাটোর্ধ্ব। তাদের মধ্যে কয়েকজন নিজেরাই হৃদরোগী। বাইপাস অপারেশনও হয়েছে ২/১ জনের। জীবনের ঝুকি এড়াতে তারা আপাতত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রেখেছেন। নগরীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, অ্যাপোলো ডায়গণষ্টিক সেন্টার, বেলভিউ ডায়গণষ্টিক সেন্টারসহ, রাহাত আনোয়ার হাসপাতাল, কনিকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার সহ বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়গণষ্টিক সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার গোলাম মাহমুদ, ডা. মজিবুর রহমান, গ্যাষ্ট্রোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল কালাম আজাদ, গাইনী বিভাগের ডা. তানিয়া আফরোজ ও প্রফেসর শিখা সাহা, ডা. নাহিদা আক্তার সুপা, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. রনজিৎ খা ও রথীন্দ্র নাথ বোস, নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা: আনোয়ার হোসেন বাবলুু, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ স্বপন কুমার সরকার, নিউরোলজিষ্ট ডাঃ মোঃ জাকির হোসেন সহ বেশ কয়েকজন নামিদামি চিকিৎসক চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। নগরীর মহাবাজ এলাকায় নূরে আলম খান বাপ্পি জানান, ৬ বছর বয়সী তার এক ভাগ্নে অসুস্থ হলে শনিবার রাতে ডা. হামিদ শেখের ব্যক্তিগত চেম্বারে দেখানো হয়। ডায়গণষ্টিক পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে প্রেসক্রিপশন করার জন্য রোববার সকালে চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে জানতে পারেন তিনি আজ থেকে আর চেম্বারে আসবেন না। আরিফুর রহমান জানান, ডা. হামিদ শেখের চিকিৎসকের ব্যক্তিগত কর্মচারীরা চিকিৎসকের সঠিক অবস্থান জানাতে অস্বীকার করায় তার ভাগ্নে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অ্য্যাপোলো ডায়গষ্টিক সেন্টারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা উজ্জল মিয়া বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন চিকিৎসক মৌখিকভাবে বলে গেছেন তারা কয়েকদিন চেম্বারে আসবেন না। তবে এর সঠিক কোন কারন ওই চিকিৎসকরা জানাননি। ডায়গণষ্টিক প্রতিষ্ঠানগুলো চিকিৎসক নির্ভর হওয়ায় তারা চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছেন না। একই কথা জানিয়ে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা। বরিশালের জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একজন চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা, না দেখা এটা সম্পুর্ন তার নিজের ব্যক্তিগত বিষয়। তাছাড়া চিকিৎসকের নিরাপত্তার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তেমন পদক্ষেপও নেয়া যায়নিথ। জরুরী রোগীদের সরকারি হাসপাতাল এবং প্রয়োজনে হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার পরমর্শ দেন জেলা সিভিল সার্জন। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম জানান, শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই সকলকে সচেতন হতে হবে। আমাদের নেতাকর্মীরা সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সদর উপজেলার ১০ইউনিয়ন এবং সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেকটি ওয়ার্ড এ গিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা এবং বিদেশ ফেরত কেউ থাকলে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন এ রাখার ব্যবস্থা করা। শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিত থাকা এবং স্বাভাবিক রোগীদের সেবা না দেয়ার বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। |