বিধবা বিবাহ
|
![]() মুক্তধারা ডেস্কঃ হিন্দু বিধবাদের পুনরায় বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে বিধবা বিবাহ বলে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে সমাজসংস্কারের জন্য যে কয়টি আন্দোলন ইতিহাসের পাতায় এখনো জ্বলজ্বল করছে, তার অন্যতম হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আন্দোলন। সে সময় অবাধে বাল্যবিয়ের ব্যাপক প্রচলন ছিল। ফলে একদিকে বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছিল; অন্যদিকে সমাজে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছিল বিধবার সংখ্যা। বিষয়টি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মনে রেখাপাত করে। তিনি হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহের জন্য সমাজসংস্কার আন্দোলন সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল পান ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই। সেদিন তাঁর প্রচেষ্টায় তৎকালীন বড়লাট লর্ড ডালহৌসি ‘দ্য হিন্দু উইডো’স রিম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৫৬’ নামে আইন প্রণয়ন করে হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহকে বৈধ করেন। এ আইন করার লক্ষ্য ছিল কিছু হিন্দু বিধবা শিশু, যারা স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার আগেই বিধবা হয়ে যেত; এ আইন পাসের মাধ্যমে হিন্দু বিধবা বিবাহের সব বাধা দূরীভূত হয়। সে বছরই ৭ ডিসেম্বর রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উপস্থিতিতে প্রথম বিধবা বিবাহের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। সে বিয়ের পাত্র ছিলেন শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। তিনি ছিলেন সংস্কৃত কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি। অন্যদিকে পাত্রী ছিলেন বর্ধমান জেলার পলাশডাঙ্গার কালীমতী দেবী। তাঁর প্রথম বিয়ে হয় চার বছর বয়সে। বিধবা হন ছয় বছর বয়সে। বিধবা বিবাহের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। বিদ্যাসাগর পরবর্তীকালে তাঁর নিজ ছেলের সঙ্গে এক বিধবা কন্যার বিয়ে দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ঈশ্বরচন্দ্রের অনেক আগেই রাজা রাজবল্লভ তাঁর নিজের শিশুকন্যার বালবৈধব্য ঘোচাতে বিধবা বিবাহ প্রচলনে উদ্যোগী হয়েছিলেন; কিন্তু নবদ্বীপের পণ্ডিতসমাজের বিরোধিতায় তা বানচাল হয়ে যায়। |